উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী
০৮ মে ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ১২:১১ এএম
উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দেশের অর্থনীতি কতটা চাঙ্গা হবে এবং স্থানীয়রা কতটা উপকৃত হবে তা বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের প্রথমে ভাবতে হবে ফলাফল কি হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রকল্প নেওয়ার পরে জনগণ কতটা উপকৃত হবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন এমনভাবে করতে হবে যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমবে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণভবনে স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বিনির্মাণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যক্রমের রুপরেখা সংক্রান্ত উপস্থাপনা অবলোকনকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
রুপরেখা প্রত্যক্ষ করার পর, প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে এবং প্রকল্পগুলি দ্রুত শেষ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম সাখাওয়াত মুন এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের কতটা উন্নয়ন হবে এবং মানুষ কতটা উপকৃত হবে তা আপনাদেরকে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুত কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলে দেশবাসী এর সুফল পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা একটি লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল জনগণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির করে আমরা সফলভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। তিনি বলেন, তার সরকার রুপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিল এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভের মধ্যদিয়ে সফলভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তর করা। আমরা সেই রূপকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে গতকাল সকালে গণভবনে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থ্যার (আইওএম) মহাপরিচালক (ডিজি) অ্যামি পোপ তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শেখ হাসিনা নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আরো তহবিল সংগ্রহের জন্য আইওএম-এর প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু (বাংলাদেশে) মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে, আইওএম-এর উচিত এই উদ্দেশ্যে আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাংবাদিকদের বিফ্রিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করতে আইওএমকে সহায়তা করার জন্যও বলেছেন। কারণ, এখানে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা এবং কর্মসংস্থানসহ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ভাষানচরে এ পর্যন্ত ৩০-৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। বৈঠকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আইওএম মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত রয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এখন তাদের এলাকায় সংখ্যালঘু হয়ে গেছে।
অ্যামি পোপ স্বাগতিক দেশের চাহিদা অনুযায়ী তাদের দক্ষতা বাড়াতে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর অভিবাসীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর জোর দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার অন্য দেশের কাউকে বোঝার জন্য পেশা ও ভাষার ওপর যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, দক্ষ জনসংখ্যা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাঁরা সারাদেশে ১১২টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরোপ বলেন, অভিবাসন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, কিন্তু, দারিদ্র্য কমলে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে, যার মধ্যে কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ দেওয়া রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আয়োজক ও উৎস দেশ উভয়েরই অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, যেহেতু তারা উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অভ্যন্তরীণভাবেও মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি এবং নদীভাঙন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কক্সবাজারের খুরুশকুলে ৪ হাজারের বেশি জলবায়ু উদ্বাস্তুকে বাড়ি দিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জলবায়ু সহিষ্ণু বাড়ি এবং বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য ভাসমান বাড়ি নির্মাণ করছে এবং গৃৃহহীনদের মাঝে বিনামূল্যে বাড়ি দিয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
অপর দিকে গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং মহামারী প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার জন্য স্বাধীন প্যানেলের কো-চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সাথে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা স্থাপন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপে আস্থা তৈরি এবং চুড়ান্ত পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে মহামারী মোকাবেলায় প্রস্তুতি এবং সাড়া প্রদানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, মহামারী প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত সংস্কার পরিচালনার ক্ষেত্রে উচ্চ-স্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য। এটি বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য আওয়াজ তোলে, জনস্বাস্থ্যের হস্তক্ষেপে আস্থা জাগিয়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যত মহামারীজনিত জটিলতা মোকাবেলা করার সময় আরো স্থিতিস্থাপক এবং প্রস্তুত বিশ্ব গঠনে আমাদের একটি শক্তিশালী এবং সিদ্ধান্তমূলক নেতৃত্ব অপরিহার্য হবে। তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত খন্ডিত বিশ্ব স্বাস্থ্য শাসন ব্যবস্থাকে মহামারী প্রতিরোধ ও সাড়াদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্ঞান, প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সক্ষমতা জোরদারে আমাদের অবশ্যই সম্মিলিত রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় অতীতের সাফল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে গঠনমূলক ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। তিনি আরও মতামত দেন যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা এবং প্রতিশ্রুতি পদ্ধতিগত পরিবর্তনের জন্য অপরিহার্য যা ‘আমাদের ভবিষ্যতের মহামারী প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ এবং কার্যকরভাবে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা’ বাড়াতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, মহামারী প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় একটি অগ্রাধিকার থাকে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা নিশ্চিত করেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পোশাকখাতের উন্নয়নে ইইউকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান বিজিএমইএর
দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রিজার্ভ সংকট জাতির জন্য অশনি সংকেত: ১২ দলীয় জোট
সংকট গভীর হওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের স্থায়ী সমাধান জরুরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : চলছে অনুসন্ধান
পর্তুগাল বাংলা প্রেস ক্লাবে যুক্ত হলেন একদল নতুন সদস্য
কাল থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ
দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই : মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী
মিডিয়ার কন্ঠরোধ করে দেশকে বাকশালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার
ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ নিয়ে গবেষণা চলছে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
বৈষম্য কমিয়ে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরিসহ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : ড. খলীকুজ্জমান
২৪ ঘন্টা থেকে সাত দিনের মধ্যে মৃত বীমা দাবি পরিশোধ করবে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানি
বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ